মেয়রের শপথ গ্রহণের পরে ৬০ দিন পার, হয়নি আসানসোল পুরনিগমের পূর্ণ বোর্ড গঠন, প্রশ্ন বিরোধীদের

ক্রান্তি সিং

আসানসোল:- আসানসোল পুরনিগমের মেয়র হিসাবে বিধান উপাধ্যায়ের শপথ নেওয়ার পরে ৬০ দিন বা দুমাস হলো গত মঙ্গলবার। কিন্তু এরমধ্যে পূর্ণ পুর বোর্ড গঠন করা হয়নি। যার মধ্যে রয়েছে, দুই ডেপুটি মেয়র, মেয়র পারিষদ ও বোরো চেয়ারম্যানের শপথ নেওয়া। এইসব না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই পুর আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধী দলের কাউন্সিলররা। ২৭ নং ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তেওয়ারি ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি মিউনিসিপ্যাল এ্যাফেয়ার্স দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে চিঠি দিয়েছেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আসানসোলের রবীন্দ্রভবনে শপথ গ্রহণ করেছিলেন আসানসোল পুরনিগমের বর্তমান মেয়র বিধান উপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেই শপথ গ্রহণ করেন পুরভোটে জিতে আসা ১০৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০৪ জন। তারপর দু’মাস কেটে গেল। এখনও মেয়র পারিষদদের বেছে নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন দফতর ভাগ করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিরোধী কাউন্সিলরদের হয়ে বিজেপি কাউন্সিলর তথা আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারির স্ত্রী চৈতালি চৈতালি তেওয়ারি বলেন, মানুষ পুরপরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী মেয়র শপথের ৩০ দিনের মধ্যে পুরবোর্ড গঠন করা উচিত। কিন্তু ৬০ দিন পেরিয়ে গেলেও বোর্ড গঠন হল না। আগেও মেয়র সাহেবকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি উপেক্ষা করেছেন। তাই প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে চিঠি পাঠালাম। এরপরেও কিছু না হলে, আইনের পথে যাবো। অভিযোগ একদিকে যেমন বোরো চেয়ারম্যান বা মেয়র পারিষদ নির্বাচিত করা হয়নি অন্যদিকে ডেপুটি মেয়র পদে দু’জনের নাম ঘোষণা হওয়ায় যে আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে তা দূর করাও যায়নি। বিরোধীদের অভিযোগ দুজন ডেপুটি মেয়র ঘোষণা মানে পুর আইনকে উপেক্ষা করা। সব মিলিয়ে পুরভোটে আসানসোলে ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯১টি ওয়ার্ডে জিতেছে তৃনমুল কংগ্রেস। একাধিক আইনি সমস্যার মুখোমুখি এখন শাসক দল তৃণমূলের পুরবোর্ড। মেয়র বিধান উপাধ্যায়কেই আগামী চার মাসের মধ্যে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ, এবারের পুরভোটে তিনি দলের তরফে কোনও ওয়ার্ডেই প্রার্থী ছিলেন না। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁর নাম মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। বর্তমানে তিনি বারাবনির বিধায়ক। একই সঙ্গে তাঁর মেয়র পদে বসতে কোনও বাধা নেই। তবে ছ’মাসের মধ্যে কোনও একটি ওয়ার্ড থেকে তাঁকে জিতে আসতে হবে। শুধু মেয়র পারিষদরা নন, একইসঙ্গে বেছে নিতে হবে পুরনিগমের দশটি বোরোর দশজন চেয়ারম্যানকে। সেই কাজটাও গত দু’মাসে করে ওঠা যায়নি। যা নিয়ে শিল্পাঞ্চলের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তো বটেই সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন। তবে সবচেয়ে জটিল হয়ে উঠেছে দুই ডেপুটি মেয়রকে ঘিরে আইনি জটিলতার প্রশ্ন। কলকাতা সহ রাজ্যের অন্য কোনও কর্পোরেশনে দুজন ডেপুটি মেয়র নেই। এই আইনে বদল আনতে গেলে রাজ্য সরকারের তরফে বিধানসভায় বিল আনতে হবে। কিন্ত শুধুমাত্র একটি কর্পোরেশনের জন্য এমন কাজ করা উচিৎ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারাই। যদিও প্রকাশ্যে এটা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই। এদিকে দুই ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক নিয়ম করে পুরনিগমে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে বসলেও দুজনের কেউই এখনও পর্যন্ত শপথ নেননি। পুরনিগমে তাঁদের ঘরের সামনে নেমপ্লেটও বসানো হয়নি। বিষয়টির ফয়সালা হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন দুজনেই।
তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে সম্ভাব্য মেয়র পারিষদ ও বোরো চেয়ারম্যানদের একটি তালিকা তৈরি করে অনেক আগেই কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । দলের ওপর মহল থেকেই এই বেছে নেওয়ার কাজটা করা হচ্ছে ।

 

কী বললেন মেয়ের বিধান উপাধ্যায়:-

মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, পুরভোটের পরেই আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাই সামান্য দেরি হয়েছে। দু/একদিনের মধ্যেই পুরবোর্ড গঠন হয়ে যাবে বলে তিনি এদিন বলেন। পাশাপাশি তিনি, বিরোধীদের পুর পরিসেবা না পাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, ঘরে বসেই তারা সব দেখতে পাচ্ছেন। ম্যানিফেস্টোতে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো, সেইমতো সব কাজ হচ্ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!