একদিকে বিশ্ব পরিবেশ উদযাপন অন্য দিকে প্রশানের নাকের ডগায় জেসিবি লাগিয়ে গাছ কেটে মাঠ  ক্লাবের সদস্যদের বলে অভিযোগ 

দুর্গাপুর :দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ইদানিংকালে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি জায়গা একশ্রেণী অসাধু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষজন দখল করে নিচ্ছেন প্রকাশ্যে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে নগর নিগমের একাধিক আধিকারিক এই অবৈধ দখলের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ। শহরের মূল রাস্তার ধারে একাধিক মূল্যবান জায়গা অবাধে লুঠ করে চলেছে এক শ্রেণী দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষজন, সব দেখেও নির্বিকার প্রশাসন।

এমনই এক ঘটনার কথা জানা গেল, গতকাল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিধাননগর সংলগ্ন সপ্তঋষি পার্কের মূল রাস্তার ওপরে অবস্থিত দুর্গাপুর সংগতি নামে একটি ক্লাবে। এদিন সকাল বেলায় হঠাৎই তারা বনদপ্তরের জায়গা যা কিনা তাদের ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে, সেই জলা জায়গাটিকে ট্রাকে করে মাটি এনে জেসিবি লাগিয়ে ভরাট করা শুরু করে। স্থানীয় মানুষজন এই ঘটনা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান এবং সবারই একটাই প্রশ্ন কি করে বনদপ্তরের জমি এভাবে ক্লাব দখল করতে পারে ? ক্লাবের এই জায়গা দখলের ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক ক্লাব কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ক্লাব কর্তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে বলে অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, “এই সরকার আমাদের, যখন খুশি, যেমন খুশি জায়গা দখল করে নেব, কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।” এহেন উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে স্তম্বিত সাংবাদিক বন্ধু তখন তৎক্ষণাৎ স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানান। স্থানীয় নগর নিগমের কাউন্সিলর দীপেন মাঝি জানান, “তিনি কোনো রকম অনুমতি দেননি অবৈধভাবে বনদপ্তরের জায়গা দখল করার জন্য। তিনি আরও জানান, সরকার যদি নিজের জায়গা রক্ষা করতে অসমর্থ হয় সেখানে আমাদের কি করার আছে ?” অবাক করার বিষয় হল, স্থানীয় কাউন্সিলর হওয়া সত্ত্বেও তার চোখের সামনে একটি সরকারি জায়গা দিনেদুপুরে লুঠ হচ্ছে দেখে তিনি নির্বিকার কেনো ? যদিও একশ্রেণীর বিরোধী দলের লোকেরা সরাসরি দীপেন মাঝিকে এই ঘটনার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করছেন।

এভাবে জমি লুঠের ঘটনায় স্থানীয় বনদপ্তরের আধিকারিক নীল রতন পান্ডার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, “বনদপ্তরের ফিল্ড অফিসাররা গতকালকেই এই ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই ক্লাব কর্তাদের সাবধান করেন এবং একটি নোটিসও তাদেরকে ধরান। বনদপ্তর-এর পরিষ্কার বক্তব্য, সরকারি জায়গা কোনোভাবেই মাটি ফেলে দখল করা যাবে না। অবিলম্বে ওই জায়গা যদি পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে না দেওয়া হয় তাহলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।” সবথেকে অবাক করার বিষয় হল এই ক্লাবটি যেখানে বনদপ্তরের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করছে, ঠিক তার ২০০ মিটার এলাকার মধ্যে রয়েছে বনবিভাগের বিট অফিস। কিন্তু বনবিভাগের ওই বিট অফিস এর কোন আধিকারিকের এ বিষয়ে কোন খোঁজ খবর না থাকায় এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন। ওই এলাকার মানুষজন অভিযোগ করে বলছেন যে, “স্থানীয় বিধাননগর বিট অফিসের আধিকারিকদের সাথে এই ক্লাবের গোপন রফা হয়েছে এই জায়গাকে দখল করার বিষয়ে।

শিল্পাঞ্চলের মূল রাস্তার ওপরে এভাবে দিনে দুপুরে মাটি ফেলে সরকারি জায়গা দখল করার প্রবণতাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা একাংশের তৃণমূল সমর্থিত গুণ্ডাবাহিনীর কাজ বলে জানিয়েছেন। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই অভিযোগ করে বলেন, “এর পিছনে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের এক গোপন উদ্দেশ্য রয়েছে। আগামী দুর্গাপুর নগর নিগমের নিবাচনে ওই ক্লাবের সদস্যদের ব্যবহার করা হবে ভোট লুঠ , এলাকায় অশান্তি ও ভীতি প্রদর্শন করার জন্য। শুধু তাই নয় ওইসব ক্লাব গুলিতে ভোটের সময় আশ্রয় দেওয়া হবে বাইরে থেকে আসা দুষ্কৃতীদের ও বোম বান্ধার আখড়া তৈরি করা হবে ওইসব ক্লাব গুলিতে, তাই চোখের সামনে সরকারি জমি লুঠ হলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা চুপচাপ। অবিলম্বে যদি ওই জায়গাকে পুরনো অবস্থায় না ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব আমরা।”

স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে পাণ্ডবেশ্বর এলাকার এক হেভিওয়েট তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সরাসরি ভাবে ওই ক্লাবের সাথে জড়িত। মূলত তারই নির্দেশে সরকারি জায়গা অবাধে লুঠের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এই ক্লাবের বিরুদ্ধে আগেও বহুবার ওই এলাকায় ব্যবসা করা সাধারণ দোকানদার থেকে শুরু করে হোটেল মালিকের কাছে জবরদস্তি তোলা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। খেলার মাঠের নাম করে ওই জমিটিকে অবৈধভাবে দখল করে সেখানে অবৈধ পার্কিং নির্মাণ করে তোলা আদায় করা হবে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি মিথ্যা প্রচারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক হোটেল মালিককে ও তার কর্মচারীদেরকে বেধড়ক মারধর করেন এই ক্লাবের কর্মকর্তারা বলে অভিযোগ। তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতাকর্মীরা মোটা টাকা তোলা নিয়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

দুর্গাপুর নগর নিগম, দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ, বনদপ্তর ও স্থানীয় পুলিশ এখনো চুপ করে বসে তামাশা দেখছেন। সরকারি জমি কিভাবে এতগুলি সংস্থার নজরদারি এড়িয়ে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এর বিভিন্ন জায়গায় লুঠ চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!